পদ্মাসেতু : স্বপ্ন ও সম্ভাবনার সংযোগ

রোজ শনিবার, ২রা জুলাই, ২০২২, ইনস্টিটিউট অফ কনফ্লিক্ট, এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজএর আয়োজনেপদ্মাসেতুঃ স্বপ্ন সম্ভাবনার সংযোগ (Padma Bridge: Connecting the Dreams and Opportunities) ” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক হোটেল লেকশোর,ঢাকাতে  অনুষ্ঠিত হয় উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা .মসিউর রহমান এবং আরো উপস্হিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এম্বাসেডর মোহাম্মদ জমির এবং এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মেজর জেনারেল আব্দুর রশীদ (অবসর)  এছাড়াও ছিলেন দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ, সংবাদকর্মী এবং আইক্লডসের উপদেষ্টা কর্মকতাবৃন্দ উক্ত অনুষ্ঠানে পদ্মাসেতুর নানান দিক  এবং ভবিষ্যতে পদ্মাসেতু বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কি কি ভূমিকা রাখতে পারে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়আলোচনার শুরুতে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এম্বাসেডর মোহাম্মদ জমির উপস্হিত সকলকে পদ্মাসেতুর গুরুত্ব ও নানান দিক নিয়ে আলোচনা শুরু করার অনুরোধ করেন।

অধ্যাপক ড. শামীম জে বসুনিয়া বলেন, শিল্পায়নের জন্য দরকার রাস্তাঘাট, চলাচল মাধ্যম। পদ্মা ব্রীজ আমাদের ঢাকার সাথে সংযোগ দিয়েছে। আসলে, পদ্মা নদী আমাজনের পরে সবচেয়ে খরস্রোতা নদী। বাংলাদেশ যে সাহস দেখিয়েছে এটা বিস্ময়কর এবং সাহসী পদক্ষেপ। এবং দিনশেষে আমরা সফল ।

আবুল হাসান চৌধুরী বলেন,  পদ্মাসেতুর আলোচনা করতে গেলেই প্রথমেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করতে হয় তার সাহসের জন্য। অপশক্তির উদ্দেশ্যে প্রকাশ করেন ক্ষোভ এবং খুঁজে বের করার অনুরোধ করেন তাদের উদ্দেশ্য কি!

পদ্মাসেতু হলো কারিগরি কবিতা, তিনি আরো যোগ করেন। তিনি আবেগ নিয়ে বলেন, যারা  মুক্তিযুদ্ধ দেখে নাই তারা পদ্মা সেতু দেখেছে।এটা একটা মহৎ অর্জন। আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে করা কেলেঙ্কারির সমালোচনা করে বলেন , যে লোক নিজের জেলার উন্নয়ন করে টাকা দিয়ে সে কিভাবে তার জেলার সুবিধায় ব্যবহৃত সেতুতে দুর্নীতি করে। সে ভালো লোক। আসলে কানাডিয়ান এজেন্সী যুক্তি ছাড়াই অন্য উদ্দেশ্য নিয়ে এটি করেছিল।

ড. আহসান হাসান মনসুর বলেন, বিশ্বব্যাংকের কিছু ভুল ছিল। বিশ্বব্যাংক সিদ্ধান্ত নিল বিচারকার্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত অর্থায়ন করবে না। অথচ তারা কাজ এগিয়ে নিতে পারত, পাশাপাশি তদন্ত করতে পারত। আমরাও দূর্নীতির উর্ধ্বে নই। তবে সেটা সাবধান করা যেত অন্যভাবে, সঠিক তদন্ত ও কাজ এগিয়ে নিয়েও।

পদ্মার ওপারে উন্নয়ন হওয়া দরকার এই কারনে যে, ঐসব এলাকা পিছিয়ে পড়া। আমাদের দেশের জন্য দ্বিতীয় পদ্মাসেতুও লাগবে। দিনশেষে এই গৌরবময় পদ্মা সেতু আমাদের সক্ষমতা জানান দিয়েছে বিশ্ববাসীর কাছে।

নিজ অর্থায়নে পদ্মাসেতু করার দুঃসাহস দেখানোর জন্য বাহবা দিব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে। গাজীপুরের শিল্পায়ন হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্হার সুফলে। সিলেটের সাথে চট্রগ্রামের সংযোগও নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এখন পদ্মা সেতুর মাধ্যমে ২১ টি জেলার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাই পদ্মা সেতু তাদের অর্থনীতি ও জিবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। অর্থনৈতিক উন্নয়ের জন্য সংযোগের ও যাতায়াত আবশ্যকীয়। তাই,  সেখানে এটির মাধ্যমে গার্মেন্টস শিল্প ও নানান অর্থনৈতিক চিন্তা নিয়ে আগাতে হবে। সরকার পলিসি সাপোর্ট দিবে এবং জনসাধারণের অর্থনৈতিক মুক্তি হবে আশা করি। ড. শামসুল আলম এভাবেই বক্তব্য শেষ করেন।

এ আরাফাত চৌধুরী  তার আলোচনায় রাজনৈতিক দিকের বিশেষত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আসলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এবং সরকারের উপর চাপের জন্য থাকে সুশীল সমাজ। কিন্তু সেই সুশীল সমাজের একটা বড় অংশের মতামত ও সমালোচনা যখন ভুল তখন তাদেরও ক্ষমা চাওয়া উচিত। পদ্মা ব্রীজের ক্ষেত্রে এমনিই হয়েছে।

শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাংকের রাজনৈতিক খেলা বুঝতে পারেন।  তাই নিজেই না করে দেন বিশ্বব্যাংককে। নিজ অর্থায়নে শুরু হয় সোনার সেতু, পদ্মা সেতু। এই সেতু নিয়েও আমরা নানা সময়ে গুজব শুনেছি এবং অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। খরচ নিয়ে প্রশ্ন করছে। আসলে এসব বিরোধীদল করছে সরকারকে হটাতে।  সমালোচনার পাশাপাশি ভালো কাজে প্রশংসাওতো করা উচিত।

জার্মান এম্বাসেডর  আখিম ট্রসটারও তার  বক্তব্য তুলে ধরেন । তিনি আইসিএলডিএসকে এবং উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে বলেন, এটি একটি সাহসী উদ্যোগ এবং জার্মানির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে অভিবাদন জানায়। এটি একটি সুন্দর ব্রীজ এবং দেশের অর্থনীতিতে এর অবদান থাকবে বলে সে আশাবাদী। দেশের ব্যবসা-বানিজ্য ও বৃহৎ একটি গোষ্ঠীর সুবিধার্থে তৈরি এই ব্রীজ বাংলাদেশের জিডিপি বৃদ্ধিতে কার্যকর হবে।

অধ্যাপক ড. হারুন অর রশীদ সকলকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, আমরা স্বাধীন না হলে হয়ত এই পদ্মা সেতু পেতাম না। আসলে জনগনের টাকা থাকলেও সেতু হয় না, এই সেতু করতে লেগেছে ইচ্ছা। অন্য সরকারতো এগিয়ে আসেনি। এত কিছুর পরেও আমরা আজ যে স্বপ্নের সেতুকে বাস্তবে দেখছি সেটা আমাদের সৌভাগ্য।এটি আমাদের আত্মমর্যাদার সেতু। একটি কুচক্রী মহল এর বিরোধিতা করেছে, অপপ্রচার চালিয়েছে এবং এখনও তা চলমান। তবু জননেত্রী শেখ হাসিনা পিছিয়ে যায়নি। সে আশাবাদী এই সেতু থেকে অর্থনৈতিক উন্নত আসবে। সে মনে করে এর অর্থনেতিক গুরুত্বের চেয়েও আত্নমর্যাদার গুরুত্ব বেশি। কারন এটি সাহসী পদক্ষেপ। আসলে শেখ হাসিনা দ্বারা সম্ভব না হলে কারো পক্ষে সম্ভব ছিল। এর পিছনের সকল শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য ইতি টানেন।

প্রফেসর ড.সাদেকা হালিম সমাজবিজ্ঞানের একজন শিক্ষক হিসেবে পদ্মা সেতুর সাথে জড়িত সমাজব্যবস্হা ও ডিসপ্লেসড মানুষেদের নিয়ে কথা শুরু করেন। তিনি বলেন, সরকার জমি অধিগ্রহণে যে পরিমান ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন ও কাউনসিলিং করেছেন তাতে বাস্তুচ্যুত লোকজন ভালো আছে। তাদের জন্য তৈরি পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলিতে যথেষ্ট সুবিধা রয়েছে। উন্নত দেশের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ছিল এই সেতুর পিছনে তা স্পষ্ট। এই সেতু অর্থনৈতিক মুক্তি আনতে পারে, যদি দক্ষিণের এইসব অনুন্নত এলাকায় শিল্পায়ন করা হয়। তবে পরিবেশ ও সমাজের ক্ষতি না হয় এমন পলিসি গ্রহণ করেই শিল্পায়ন ঘটাতে হবে। নয়ত হিতে বিপরীত হতে পারে। পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে আনতে হবে। আমরা যেন দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলা ইউন ইউন সিচুয়েশনে করতে পারি এই পদ্মা সেতুর ঐপাড়ের এলাকায়। এছাড়াও এসব এলাকায় হাসপাতাল সুবিধা, গ্যাস সাপ্লাই দেয়ার জন্য ভোলা বরিশাল ব্রীজ করতে হবে। আমরা জানি ভোলা কতটা গ্যাস সমৃদ্ধ। নারীদের অভাব পূরন করতে হবে। এজন্য আমরা এটাকে ‘পদ্মা সেতু প্লাস’ বলছি।

এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, এটি আমাদের আন্তর্জাতিকভাবে ব্রান্ডিং করছে। শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। মংলা, কুয়াকাটা এবং সুন্দরবনের জন্য এই ব্রীজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণের বানিজ্য এর ফলে বেড়ে উঠবে। আমরা যদি পদ্মা সেতুর ঐপাড়ে ইউটিলি তৈরি করতে পারি তবে ব্যবসায়ী ও কারখানার মালিক নজর দিবে। তাই সঠিকভাবে শিল্প বিপ্লব করতে হলে অবকাঠামোগত ও কাঠামোগত ভিত্তি তৈরি করতে হবে। এই সেতুর গুরুত্ব অপরিসীম কারন এর সাথে দক্ষিণের মানষের অর্থনৈতিক সুবিধা জড়িত, ব্যবসা জড়িত। সে আশাবাদী ২০৪১ সালের বাংলাদেশ বির্নিমাণে এই পদ্মা সেতুর গুরুত্ব হবে অসীম। সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন।

মাসুদা ভার্ট্রি বলেন, টিআইবির রিপোর্টে টানা পাঁচবারে চ্যাম্পিয়ন হয় বিএনপির আমলে বাংলাদেশ। সেখানে আওয়ামীলীগ ও শেখ হাসিনার সরকার আকাশছোঁয়া উন্নতি করেছে। তিনি আরো যোগ করেন যে, সুশীল সমাজকে যড়যন্ত্র থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। দুর্নীতির দোষারোপ দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণে যে বাধা বাংলাদেশ পেয়েছে তা শেখ হাসিনা একাই দাড়িয়ে থেকে বানিয়ে দেখিয়ে প্রমান করেছে এই সরকার কতটা সক্ষম।

ড. মসিউর রহমান পদ্মা সেতুর শুরুর কাহিনী বলেন। সে তখনই বলেছিলেন যে তিনি শেখ হাসিনার মত নেতৃত্ব যেখানে আছে সে হতাশ নয় সেখানে। এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব তুলে আনেন। এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনায় কি করতে হবে তা বলেন।  খুব কাছ থেকে তিনি এই সেতু হতে দেখেছেন। তার আবেগ থেকে এই সেতুর জয়গান করেন এবং এর পিছনের সংগ্রাম সম্পর্কে সকলকে অবগত করেন।

মেজর জেনারেল আব্দুর রশীদ বলেন, পদ্মা সেতুর সাথে জনগনের সংযোগ ঘটাতেই এই আয়োজনের ব্যবস্হা করেছে আইসিএলডিএস।  এই প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বাস করে যে, পদ্মাসেতু এদেশের নতুন সক্ষমতার বাস্তব রুপ ও এর সাহস নিয়ে এগিয়ে যাবে দেশ।

 

এক নজরেঃ

অনুষ্ঠানের নাম : গোলটেবিল

বিষয় : পদ্মাসেতু : স্বপ্ন সম্ভাবনার সংযোগ

(Padma Bridge: Connecting  the Dreams and Opportunities)

তারিখ : ২জুলাই, ২০২২ শনিবার

স্থান : হোটেল লেকশোর

 

প্রধান অতিথি :

  • . মসিউর রহমান

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা

 

উপস্থিত অতিথিঃ

  • ড. শামসুল আলম

প্রতিমন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়

  • অধ্যাপক . শামীম জে বসুনিয়া

পদ্মা বহুমুখি সেতু বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান

  • অধ্যাপক . আইনুন নিশাত

পদ্মা বহুমুখি সেতু বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য

  • মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া

সাবেক সচিব, সেতু বিভাগ

  • আবুল হাসান চৌধুরী

সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

  • . আহসান এইচ মনসুর

নির্বাহী পরিচালক, পিআরআই অর্থনীতিবিদ

  • নাঈমুল ইসলাম খান

প্রধান সম্পাদক,দৈনিক আমাদের নতুন সময়

  • অধ্যাপক . হারুন অর রশীদ

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী

  • মো.জসিম উদ্দিন

সভাপতি,এফবিসিসিআই

  • . জামালউদ্দিন আহমেদ

সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি

  • অধ্যাপক . সাদেকা হালিম

সমাজবিজ্ঞানী

  • . নাজনীন আহমেদ

কান্ট্রি ইকোনোমিস্ট, ইউএনডিপি

  • মাসুদা ভাট্টি

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দৈনিক আমাদের অর্থনীতি

 

Add a Comment