দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল! সম্পাদকীয় শ্যামল দত্ত, সম্পাদক, ভোরের কাগজ
কোনোভাবেই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো যাচ্ছে না। প্রতিদিন সড়কে প্রাণহানির খবর আমরা গণমাধ্যমে পাচ্ছি। সড়কে এই লাশের মিছিল কে থামাবে? রাজধানীতে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে নিভে গেল এক দম্পতির জীবনপ্রদীপ। চুয়াডাঙ্গাতেও একইভাবে আলমসাধু নামের একটি স্থানীয় গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষে মোটরসাইকেল আরোহী এক দম্পতি নিহত হয়েছে। সাভারে অটোরিকশাচাপায় এক মেয়ে এবং বকশীগঞ্জে ট্রাক্টরচাপায় এক শিশু নিহত হয়েছে। লালমনিরহাটে ডিউটি শেষে মোটরসাইকেলে করে থানায় ফেরার পথে গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষে দুই পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। হবিগঞ্জে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। চট্টগ্রামে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় এক যুবক নিহত হয়েছেন। কুমিল্লায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া মানিকগঞ্জের ঘিওরে দুই বাসের সংঘর্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। গত ২ দিনে সড়কে প্রাণগুলো ঝরে পড়ে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় দফায় দফায় নির্দেশ জারি, নতুন আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ সত্তে¡ও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (এআরআই) গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৩ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের বেপরোয়া গতি। কিন্তু গতি নিয়ন্ত্রণ, মহাসড়কে ছোট যানবাহন বন্ধ ও বেপরোয়া যানবাহন চলাচল বন্ধে সাফল্য নেই। এখনো দেশের সড়ক-মহাসড়কে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে ১০ লাখ নসিমন-করিমন-ইজিবাইক। অবাধে আমদানি হচ্ছে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক। দেশব্যাপী অন্তত ৫ লাখ ফিটনেসবিহীন বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, হিউম্যান হলার অবাধে চলছে। নিবন্ধনবিহীন কয়েক লাখ অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে সড়ক-মহাসড়কে। এসব যানবাহন সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান উৎস। দুর্ঘটনায় দায়ীদের শাস্তির নজিরও তেমন নেই। যার ফলে চালকরা ইচ্ছামতো গাড়ি চালান। হাই রিস্ক নিয়ে ওভারটেক করেন। এ ছাড়া চালকদের প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে, যা সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। ফুটপাত দিয়ে মানুষ চলাচলের অবস্থা নেই। কাজেই মানুষ বাধ্য হয়ে মূল রাস্তায় হাঁটছে এবং দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। বাসে সিট বেল্ট বাঁধার ব্যবস্থা, হেলমেট ব্যবহার কম থাকায় ছোটখাটো দুর্ঘটনাতেও প্রাণহানি ঘটছে। ইদানীং মোবাইল ফোন কানে রেখে গাড়ি চালানো যেন ফ্যাশন অনেক চালকের কাছে। যদিও এ কাজ থেকে বিরত রাখতে আইন আছে। কিন্তু সে আইনের ব্যবহার হয় না। এ কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্যক উপলব্ধি করে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর অনুমোদন দিয়েছেন। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, পরিস্থিতির উন্নতি তো দূরের কথা ন্যূনতম শৃঙ্খলা নেই কোথাও। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সমাধানের অযোগ্য কোনো বিষয় নয়। এজন্য দরকার ইতিবাচক চিন্তা ও সমন্বিত পদক্ষেপ। পরিবহন মালিক, শ্রমিকদের পাশাপাশি যাত্রীদের সচেতন হতে হবে এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে।
Source : The Daily Bhorer Kagoj প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৯, ২০২১ , ১০:১২ অপরাহ্ণ আপডেট: জানুয়ারি ১৯, ২০২১ , ১০:২২ অপরাহ্ণ