যুক্তরাষ্ট্রের জটিল প্রেসিডেন্ট নির্বাচন – আবদুল মান্নান

সারা বিশ্বের দৃষ্টি এখন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। আগামী ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ তাদের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে যাচ্ছে। নির্বাচনে প্রতিবারের মতো এবারও দুটি দল সরাসরি অংশগ্রহণ করবে। এর একটি হচ্ছে রিপাবলিকান পার্টি, আরেকটি হচ্ছে ডেমোক্রেটিক পার্টি। প্রথমটির নির্বাচনী প্রতীক হাতি আর অন্যটির গাধা। যুক্তরাষ্ট্রের জন্ম থেকেই প্রথম কয়েকটি নির্বাচন বাদ দিলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এই দুটি দলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে, যদিও প্রতিবারই দু-একটি ছোটখাটো দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের একই দিন কংগ্রেস সদস্যরাও নির্বাচিত হবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিষয়টি বেশ জটিল এবং খোদ যুক্তরাষ্ট্রের অনেক নাগরিক নিজ দেশের নির্বাচন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখেন না। তাঁরা অনেকেই জানেন না কিভাবে তাঁদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। উদাহরণ হিসেবে ধরে নিতে পারি, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ২০১৬ সালে নির্বাচিত হয়েছিলেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে। ওই নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে সাধারণ ভোটারদের কাছ থেকে প্রায় ৩০ লাখ বেশি ভোট পেয়েছিলেন। জয়ী হয়েছিলেন ট্রাম্প। সাধারণ মানুষ হিলারি ক্লিনটনকে ভোট দিলেও শেষতক কেন ট্রাম্প জয়ী হয়েছিলেন এই জটিল বিষয়টি বুঝতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের জটিল নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যে ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি আছে সেটা বুঝতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্য বা স্টেট আছে, যা প্রায় সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত। প্রতিটি স্টেট নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনেক স্বাধীন। প্রতিটি স্টেটের নিজস্ব পতাকা আছে। আছে নিজেদের প্রতীক। অনেক আইন-কানুন, বিশেষ করে কর-খাজনা, ফৌজদারি ও দেওয়ানি বিষয়ক আইন-কানুন তারা নিজেরাই তৈরি করে। অনেক রাজ্য আছে, যেখানে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদিত নয়, আবার জুয়া ও পতিতাবৃত্তি আইনসিদ্ধ। দু-একটি রাজ্যে দোকানে গাঁজা বিক্রি করাও আইনে অনুমোদিত।

দেখা যাক যুক্তরাষ্ট্রের ইলেকটোরাল পদ্ধতি কিভাবে কাজ করে। যুক্তরাষ্ট্রে ৫০টি স্টেটের জনসংখ্যা অনুপাতে ইলেকটোরাল কলেজের সংখ্যা নির্ধারিত হয়। উদহারণস্বরূপ, ওহাইও স্টেটের জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি ১২ লাখ। এই এক কোটি ১২ লাখের ইলেকটোরাল কলেজ ভোট হচ্ছে ১৬টি। ৫০টি রাজ্যে মোট ইলেকটোরাল ভোট হচ্ছে ৫৩৮টি, যার মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হতে হলে প্রয়োজন ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। যে অঙ্গরাজ্য যত বেশি জনবহুল, সেই রাজ্যের ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের সংখ্যা তত বেশি। ক্যালিফোর্নিয়ায় ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা ৬৩, এরপর টেক্সাস ৩৬। ওয়াশিংটন ডিসিতে আছে মাত্র তিনটি ভোট। কোনো একটা স্টেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটাররা যদি ট্রাম্পকে ভোট দেয়, তাহলে ধরে নিতে হবে ওই স্টেটের সব ইলেকটোরাল কলেজ ভোট ট্রাম্পের। এই হিসাবে যে প্রার্থীর ভাগ্যে ২৭০টি ভোট পড়ছে সে প্রার্থী পরবর্তী মেয়াদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।

সব কিছু ২০০১ সালের নির্বাচন পর্যন্ত ঠিকঠাক চলছিল। সেবার রিপাবলিকান প্রার্থী ছিলেন জর্জ বুশ জুনিয়র, আর ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী আল গোর, যিনি বিল ক্লিনটনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। নির্বিঘ্নে ভোট নেওয়া শুরু হলো। সমস্যা দেখা দিল ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে এসে। সেখানে বেশ কয়েকটি নির্বাচনী এলাকায় ভোট দেওয়ার মেশিন ত্রুটিপূর্ণ। গণনার সময়ও বিপত্তি। সেখানে ইলেকটোরাল কলেজ ভোট ২৫টি। বুশ আর গোরের মধ্যে এই অঙ্গরাজ্য ছাড়া অন্য সবখানে লড়াই হাড্ডাহাড্ডি। এই রাজ্যে যে জিতবে সে হবে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট, তেমনটিই সবার ধারণা। বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য গেল ফ্লোরিডার উচ্চ আদালতে। আদালত জানালেন, ভোট হাতে গোনা হোক। অপেক্ষার পালা আর শেষ হয় না। কেটে গেল তিন সপ্তাহ। শুরুতে সেই দেশের মিডিয়া একবার গোরকে বিজয়ী ঘোষণা করে তো আরেকবার বুশকে। মামলা গেল সুপ্রিম কোর্টে, যেখানে রিপাবলিকানপন্থী বিচারক বেশি। অনেকের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থা একেবারে শতভাগ নিরপেক্ষ। মারাত্মক ভুল ধারণা। এবার ট্রাম্প আগেভাগেই সুপ্রিম কোর্টকে রিপাবলিকানপন্থী বিচারক দিয়ে তাঁর পক্ষে নিয়ে রেখেছেন। বলা তো যায় না। ২০০১ সালে সুপ্রিম কোর্ট ফ্লোরিডার সঠিক গণনা ছাড়া রায় দিল, বুশই হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৩তম প্রেসিডেন্ট। গোর অত্যন্ত ভদ্র মানুষ। আগেভাগেই তিনি মেনে নিয়েছিলেন হোক বুশ পরবর্তী প্রেসিডেন্ট, বাঁচুক যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র। পরবর্তীকালে দেখা গেল, ফ্লোরিডার ভোট যদি সঠিকভাবে গোনা হতো, তাহলে আল গোরই হতেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৩তম প্রেসিডেন্ট।

সামনের নির্বাচন ঘিরে সারা বিশ্বে যে নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনা চলছে তার কারণ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বে অন্যতম সামরিক পরাশক্তি। দেশটি বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সারা বিশ্বে তেল থেকে শুরু করে যেসব ভোগ্যপণ্য উৎপাদিত হয় তার একটি বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি চাঙ্গা থাকলে তার প্রভাব অন্যান্য দেশেও পড়বে, তা স্বাভাবিক। সুতরাং সেই দেশে একজন যোগ্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তা অন্যান্য দেশের জন্য মঙ্গল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সাংবিধানিকভাবে মোটামুটি ক্ষমতাবান হলেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কংগ্রেস ও সিনেটের অনুমোদন নিতে হয়। প্রেসিডেন্ট গোঁয়ার হলে কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে নানা অজুহাতে অন্য দেশ আক্রমণ করতে পারে। বুশ কারো মতামতের তোয়াক্কা না করে ইরাক আর লিবিয়া দখল করেছিলেন। জাতিসংঘের কত বাধা-নিষেধ। কে শোনে কার কথা। এসব কারণে কে হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, সেদিকে সবার নজর।

আরেকটি কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিশ্বের অনেক দেশের মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে। যুক্তরাষ্ট্রকে বলা হয় অভিবাসীদের দেশ। বিদেশে অভিবাসন নিয়ে যে কটি দেশ অন্য দেশের মানুষ পছন্দ করে তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম। তবে সাধারণত রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট হলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সব সমস্যার জন্য অভিবাসীদের দোষারোপ করতে পছন্দ করেন। ট্রাম্পও তাঁর ব্যতিক্রম নন।

পর পর যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যে ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল আগামী নির্বাচন তার চেয়ে বেশি বিতর্কিত হবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। এরই মধ্যে ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, নির্বাচনে তিনি পরাজিত হলে তা মেনে না-ও নিতে পারেন। প্রয়োজনে তিনি উচ্চ আদালতে যাবেন। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, নির্বাচনের দিন ও নির্বাচন-পরবর্তীকালে সেই দেশে ভয়াবহ বর্ণবাদী দাঙ্গা-হাঙ্গামা ছড়িয়ে পড়তে পারে। এযাবৎ জনমত জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাটদলীয় প্রার্থী সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ট্রাম্পের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে আছেন। কোনো একজন প্রার্থীর পক্ষে সে দেশের মিডিয়ার সমর্থন যুক্তরাষ্ট্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ পর্যন্ত প্রধান মিডিয়াগুলো বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে আরো যোগ্য প্রেসিডেন্ট পাওয়ার দাবিদার, হতে পারেন তিনি জো বাইডেন। তবে দিনশেষে ফলাফল কী হবে সে সম্পর্কে ধারণা করা খুবই কঠিন।

ট্রাম্প কখনো রাজনীতির সঙ্গে তেমন একটা জড়িত ছিলেন না; যদিও নব্বইয়ের দশকে তিনি একজন ডেমোক্র্যাট সমর্থক ছিলেন। তিনি মূলত একজন সফল ব্যবসায়ী, যাঁর পিতামহ জার্মানি থেকে কানাডা হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। তাঁর পিতামহ ফ্রেডরিক ট্রাম্প একসময় পতিতালয় পরিচালনা করতেন। কিছুদিন নাপিতের কাজও করেছেন। ১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লু মহামারির সময় মারা যান। একসময় ট্রাম্প একটি অননুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক ছিলেন, যা ২০১৬ সালে বন্ধ হয়ে যায়। আদালত ট্রাম্পকে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ২৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করেন। ট্রাম্পের রিয়েল এস্টেট ব্যবসাও আছে। তবে তাঁর সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা হচ্ছে ভোগ্যপণ্যের পাইকারি ও খুচরা বিক্রয়, যার অন্যতম হচ্ছে তৈরি পোশাক। এর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ জোগান দেয় বাংলাদেশ। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, গত চার বছরে ট্রাম্প মাত্র সাড়ে ৭০০ ডলার আয়কর দিয়েছেন।

এবার বেশ কিছু নতুন জটিলতার মধ্য দিয়ে আসন্ন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্যানডেমিকের কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রেও এক ধরনের অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এই পর্যন্ত মারা গেছে দুই লাখের ওপর মানুষ। এই পরিপ্রেক্ষিতে এবার ভোটাররা নির্বাচনী বুথে না গিয়ে ডাকযোগে ভোট দিতে পারবেন। এরই মধ্যে অনেক রাজ্যে ডাকযোগে ভোট দেওয়া শুরু হয়ে গেছে। এতে ট্রাম্পের অসুবিধা, কারণ তাহলে যেসব ভোটার আগে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতেন না তাঁরা এবার ভোট দিতে উৎসাহিত হবেন। কারণ অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, না যাওয়ার দলে ডেমোক্র্যাট ভোটারের সংখ্যা সব সময় বেশি। আবার অনেক জায়গায় ডেমোক্র্যাট ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য নানাভাবে নিরুৎসাহ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে একটি বিরাটসংখ্যক আফ্রিকান মুসলমান অভিবাসী আছে, যাদের অনেকে ভোট দেওয়াকে হারাম বলে মনে করে। তবে তাদের বর্তমান প্রজন্ম ভোট দিতে আগ্রহী। তাদের অনেকেই ডাকযোগে ডেমোক্র্যাটদের ভোট দিতে পারে। ডাকের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার নিয়ম করা হয়েছিল বিদেশে কর্মরত যুক্তরাষ্ট্রের যেসব কর্মচারী আছে, বিশেষ করে সেনাবাহিনী আছে তাদের জন্য। ট্রাম্প এরই মধ্যে ঘোষণা করেছেন, ডাকের মাধ্যমে ভোটে কারচুপি হতে পারে। অনেকের কাছে তা অবিশ্বাস্য মনে হবে। সত্যটা হচ্ছে, সেই দেশের কারচুপি বেশ চমকপ্রদ, যা আমাদের দেশের মানুষ চিন্তাও করতে পারবে না। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর শেখ হাসিনা সূক্ষ্ম কারচুপির কথা বললে অনেকে তাঁকে নিয়ে বেশ হাসিঠাট্টা করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে সূক্ষ্ম কারচুপি কেমন করে হয় তা অন্য সময় লেখার ইচ্ছা আছে। ট্রাম্প ‘নিরপেক্ষ’ পর্যবেক্ষকের দাবি তুলেছেন। হ্যাঁ, এটি যুক্তরাষ্ট্রে ঘটছে, বাংলাদেশে নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে দুই প্রার্থীর মধ্যে যে তিনটি বিতর্ক হবে বলে ঠিক করা হয়েছিল গত বুধবার তার প্রথমটি হয়ে গেল। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ ও সারা বিশ্বের মিডিয়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং বলেছে, তারা তাদের জীবদ্দশায় এত নিম্নমানের ও নোংরা বিতর্ক শোনেনি। অনেকের ধারণা, স্কুল বিতর্কও এর চেয়ে ভালো হয়। বাংলাদেশে অনেকে বলছেন, এই দেশে বেসরকারি টিভি টক শোর মান এই বিতর্কের চেয়ে অনেক ভালো। ট্রাম্প জো বাইডেনকে বারবার ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন। বর্ণবাদকে প্রকাশ্যে সমর্থন করেছেন। কভিড-১৯-এ দুই লাখ মানুষের মৃত্যু তাঁর গাফিলতির কারণে হয়েছে বললে তিনি তা অস্বীকার করে বলেন, তাঁর কারণেই মৃত্যু বরং কম হয়েছে। শুরুতে যখন বলা হলো কভিড-১৯ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় হিসেবে মাস্ক পরতে হবে, ট্রাম্প তা শুধু বাজে কথা বলে উড়িয়েই দেননি, বলেছেন, মাস্ক তো জঙ্গিবাদীরা পরে। তাঁর অনুসারীরা বললেন, বেশ বেশ। অনেক জায়গায় মাস্কবিরোধী মিছিল বের হলো। বলা হলো, মাস্ক পরা একটি মানবতাবিরোধী ব্যবস্থা। বৃহস্পতিবার জানা গেল, ট্রাম্প ও তাঁর স্ত্রী মেলানিয়া দুজনই করোনায় আক্রান্ত। তবে এই কথা অনেকেই বিশ্বাস করতে চাইছে না। কারণ গত চার বছর ট্রাম্প যত কথা বলেছেন তার কোনটা সত্য, আর কোনটা নয়, তা অনেকেই বুঝতে পারেননি। অনেকের ধারণা, ১৪ তারিখের দ্বিতীয় বিতর্ক এড়ানোর জন্য এটি ট্রাম্পের একটি চাল। তবে একটা কথা মানতে হবে ট্রাম্পের আমলে বিশ্বে মার্কিন সামরিক আগ্রাসন কম হয়েছে। ওবামা নির্বাচিত হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মাথায় তাঁকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় এই প্রত্যাশায়, তাঁর আমলে বিশ্বে শান্তি ফিরে আসবে। কিন্তু ওবামার আমলে মধ্যপ্রাচ্যে ড্রোন কিলিং সবচেয়ে বেশি হয়েছে। যদিও এই মুহূর্তে জো বাইডেন এগিয়ে আছেন, শেষতক কী হয় তা বলা মুশকিল। ট্রাম্পের করোনা হয়েছে বলে ভোটারদের সহানুভূতি ভোটে তিনি জিতেও যেতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের সংজ্ঞাই আলাদা। তবে যেই জিতুক বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের তেমন একটা উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হবে না।

লেখক : বিশ্লেষক ও গবেষক

https://www.kalerkantho.com/online/national/2020/10/04/962052

https://www.kalerkantho.com/home/printnews/962052/2020-10-04

Add a Comment