স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি দমন করা কি কঠিন? সম্পাদকীয় (শ্যামল দত্ত, সম্পাদক, ভোরের কাগজ)

দুর্নীতি-অনিয়ম যে কোনো খাতেই ক্ষতিকর; কিন্তু স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক অধিকারের ইস্যুর ক্ষেত্রে এটি অনেক বেশি স্পর্শকাতর। করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যেও স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র আমাদের দেখতে হচ্ছে। এমন ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। সরকারি ওষুধ থেকে শুরু করে জীবাণুরোধক মাস্ক সরবরাহ নিয়েও চলছে নানা ধরনের অনিয়ম। কোনো প্রতিষ্ঠান মানহীন মাস্ক সরবরাহ করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা, আবার কোনো প্রতিষ্ঠান সংখ্যায় কম দিয়েও বিল উত্তোলন করছে বেশি। চলমান সংকটকালে এমন অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে নামি প্রতিষ্ঠানগুলোও। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন কার্যালয়ে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে দুর্নীতির একটি শক্তিশালী দুষ্ট বলয় তৈরি হয়েছে। তারা সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ওষুধ, সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে সিন্ডিকেট গঠন করে স্বাস্থ্য খাতে জনসাধারণের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি বাজেটের অর্থ আত্মসাৎ করছে। করোনাকালে স্বাস্থ্যের অব্যবস্থাপনার চিত্র নিয়ে গণমাধ্যমও সোচ্চার। ইতোমধ্যে চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী আবজাল হোসেন, সাবরিনা, আরিফুর রহমানের মতো কিছু চুনোপুঁটি ধরা পড়ে কারাগারে গেলেও মাফিয়ারা সব সময়ই থাকেন বহালতবিয়তে। আবজাল যদি কয়েকশ কোটি টাকার মালিক হন, তাহলে তার আশ্রয়দাতা মাফিয়ারা কী পরিমাণ অর্থ লুট করেছেন এমন প্রশ্ন সবার মুখে মুখে। স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির বরপুত্র মোতাজজেরুল ইসলাম মিঠু এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবজালের মতো আরো ২৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কিন্তু আবজাল ছাড়া আর কারোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার অনেকে পেয়েছেন পদোন্নতি। দুদকে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাদের একজন পরিচালককে বদলি করে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এমন ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক অধিকার। কাজেই এ খাতটির অনিয়ম-দুর্নীতি রোধ না করলে মৌলিক অধিকারের প্রতি অবহেলার মতো প্রশ্নও সামনে আসবে। তাছাড়া এভাবে অনিয়ম-দুর্নীতি চলতে থাকলে আমাদের স্বাস্থ্য খাতের জন্য অশনিসংকেত হিসেবে দেখা দেবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনা মহামারিতে দেশ জেরবার। ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ কীভাবে সামাল দেয়া যাবে, তা নিয়ে রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব চিন্তিত। প্রধানমন্ত্রী নিজে উপর্যুপরিভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি ঘোষণা দিয়ে আসছেন। এন-৯৫ মাস্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে করোনাকালেও স্বাস্থ্য খাতের কেনাকাটার দুর্নীতির বিষয়টি সামনে আসে, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। প্রতি বছর স্বাস্থ্য খাতে সরকারের পক্ষ থেকে বড় অঙ্কের বরাদ্দ দেয়া হলেও তার সিংহভাগ লুটেরা চক্রের পকেটে যায় এমন অভিযোগ ওপেন সিক্রেট। দুর্নীতির নিকৃষ্ট জীবরা যে স্বাস্থ্যব্যবস্থা পঙ্গু করে ফেলেছে সে সত্যটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে করোনাকালে। স্বাস্থ্য খাতে অনিয়মের যে অভিযোগ উঠেছে, তা খতিয়ে দেখে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনোভাবেই যেন আবজাল-মিঠুরা ছাড় না পায় সেদিকে প্রশাসনকে নজর রাখতে হবে।

 

 

https://www.bhorerkagoj.com/2020/08/27/স্বাস্থ্য-খাতে-দুর্নীতি-2/

 

Add a Comment