আত্মসন্তুষ্টি নয়, প্রয়োজন আদর্শের লড়াই
অধ্যাপক আবদুল মান্নান
একশ্রেণির আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী আছেন যাঁরা দল বা তাঁদের নেতানেত্রীদের সম্পর্কে ভালো কিছু শুনলে লাফিয়ে ওঠেন এবং চরম আত্মসন্তুষ্টিতে ভোগেন। ভালো কিছু শুনলে আনন্দিত হওয়ার মধ্যে দোষের কিছু নেই, তবে তা যখন চরম আত্মসন্তুষ্টিতে পৌঁছে তখন তা বিপদের কারণ হতে পারে। এই সত্যটা উপলব্ধি করার মতো সক্ষমতার ঘাটতি অনেকের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে আওয়ামী লীগসহ সব প্রগতিশীল দল, গোষ্ঠী ও ব্যক্তি মনে করেছিলেন, বঙ্গবন্ধু বা আওয়ামী লীগের সামনে আর কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। এখন শুধু তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা। যে ব্যক্তি জীবনে রাজনীতি করেনি বা আওয়ামী লীগকে শখের পাকিস্তান ভাঙার জন্য দায়ী করত, বলত, হিন্দু বেটা মুজিব দেশটাকে ছারখার করে দিল তারাও রাতারাতি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বনে লাইসেন্স পারমিটের ব্যবসা ফেঁদে লাখোপতি হওয়া শুরু করল। যে ব্যক্তি চার আনা বান্ডেলের আজিজ বিড়ি ফুঁকত, তার ফিনফিনে কাপড় দিয়ে তৈরি শার্টের পকেটে দেখা গেল দামি ফাইভ ফিফটি ফাইভের প্যাকেট। তাদের এসব অপকর্মে সহায়তা জোগাল এক শ্রেণির অপরিণামদর্শী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। রাজনীতির মাঠে একসময় সেই নব্য আওয়ামী লীগারদের দাপাদাপিতে আসল আওয়ামী লীগাররা হারিয়ে গেলেন। আবার এই নব্য আওয়ামী লীগারদের কাণ্ডকারখানা দেখে আর এক শ্রেণির পোড় খাওয়া কিন্তু বোকা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী চার আনা দামের স্টার সিগারেট কিনে খালি ফাইভ ফাইভের প্যাকেটে পুরে বুক পকেটে রাখা শুরু করল। এতে সাধারণ মানুষের কাছে একটি ভুল বার্তা পৌঁছল। এসবের প্রেক্ষাপটেই ঘটে গেল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বিয়োগান্ত ঘটনা। দীর্ঘ সময়ের জন্য জাতি হয়ে গেলে এতিম। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ হাঁটা শুরু করল পাকিস্তানের দিকে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের রাজনীতি, গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেছে। সমীক্ষাটি করা হয় ২০১৬ সালের ২৩ থেকে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয় টেলিফোনের মাধ্যমে। বলে রাখা ভালো, এ ধরনের সমীক্ষার গ্রহণযোগ্যতা অত্যন্ত সীমিত ও সাময়িক এবং তার ওপর ভিত্তি করে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা বিপজ্জনক হতে পারে। যার উত্কৃষ্ট উদাহরণ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এই নির্বাচন শুধু জনমত জরিপকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেনি, গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতাকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সব প্রথম কাতারের গণমাধ্যম ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। কয়েকটি পত্রিকা তো নতুন প্রেসিডেন্টের মন্ত্রিসভায় কাদের থাকা উচিত তাও ঠিক করে দিয়েছিল। আর বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন নতুন প্রেসিডেন্ট হিলারি ক্লিনটনকে নিয়ে প্রচ্ছদ কাহিনীও তৈরি করে ফেলেছিল। তার পরের ঘটনা এখন বিশ্ববাসী জানে। ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, ৭০ শতাংশ মানুষ মনে করে বাংলাদেশ বর্তমান সরকারের আমলে ঠিক পথে চলছে। ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে যখন খালেদা জিয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন এই সংখ্যা ছিল মাত্র ১৪ শতাংশ। মানুষ জেনে হোক আর না জেনে হোক চাইছিল শেখ হাসিনা অসাংবিধানিক উপায়ে একটি নির্বাচন করতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সমঝোতা করুক। শেখ হাসিনা তাঁর সিদ্ধান্তে অবিচল থেকেছেন। নির্বাচন হয়েছে। একটি জাতীয় দৈনিক তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে জরিপ করে বলেছিল, ৫ শতাংশ ভোটার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তা নিয়ে এই দেশের একদল সুধী আর একশ্রেণির মিডিয়া চারদিকে তুলকালাম ঘটানোর চেষ্টা করল। শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কারণে সেই যাত্রায় সবাই মার খেয়ে গেল। কিন্তু একটি সত্য উপলব্ধি করতে হবে এই যে ৭৫ শতাংশ মানুষ মনে করছে দেশ বর্তমানে ভালো চলছে, তারা সবাই আওয়ামী লীগ সমর্থন করে না। তারা হয়তো আপাতত শান্ত অবস্থায় খুশি। শান্তিতে কাজকর্মে যেতে পারে। বাচ্চারা নিরাপদে স্কুলে পৌঁছে। সবার আয়-রোজগার ভালো। না খেয়ে কেউ মরছে না। তবে সুযোগ পেলে তারা মনে করতে পারে আরো বাড়তি শান্তি পেতে হলে আওয়ামী লীগের বদলে অন্য কাউকে ক্ষমতায় বসাতে হবে। রাজনীতিসচেতন নয়, তেমন ব্যক্তিরা মনে করতে পারে বিএনপি জামায়াতকে নিয়ে আর একবার ক্ষমতায় যাক না। বাংলাদেশ পাকিস্তান হলে তাতে ক্ষতি কী? বাপ-দাদারা তো পাকিস্তানই চেয়েছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো একজন ক্লাউনকে যদি মার্কিনরা তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারে তাহলে বাংলাদেশে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। একজন কিশোর বলছিল, বর্তমান সরকারের আমলে তাদের গ্রামের অসাধারণ সব উন্নতি হয়েছে, যা আগে কখনো হয়নি। জানতে চাই, কোন দলকে সমর্থন করে। বলে, বিএনপিকে! কেন? কারণ তাদের পরিবারের সবাই খালেদা জিয়ার ভক্ত। একবার প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আহমেদ সাপ্তাহিক বিচিত্রায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি খালেদা জিয়ার একজন ভক্ত, কারণ বিএনপিপ্রধান নাকি দেখতে সুন্দর। বঙ্গবন্ধুকন্যা তো পাশের বাড়ির বড় বুবু, কারো ফুফু। এক অনুষ্ঠানে এক বালিকাকে দেখি তাঁকে দাদি বলে সম্বোধন করতে। একেবারে আটপৌরে আপাদমস্তক বাঙালি। বুবু, ফুফু আর দাদি তো সবার বাড়িতে আছেন। দেখতে সুন্দর মহিলা সবার বাড়িতে না-ও থাকতে পারে। আর তিনি যদি সব সময় সেজেগুঁজে থাকেন, তাহলে তো আরো দৃষ্টিনন্দন। ভালো লাগবে না কেন?
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল তাদের জরিপে আরো দেখিয়েছে, এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে ৩৫ শতাংশ ভোটার আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে আর ৫ শতাংশ দেবে বিএনপিকে। জামায়াত পাবে ২ শতাংশ। ৫ আর ২=৭ শতাংশ। আর ৩৫ শতাংশ আছে যারা কাকে ভোট দেবে তা বলতে চায় না। তারা হচ্ছে দলনিরপেক্ষ ভোটার, বলা যায় সুবিধাবাদী। তাদের অনেকেই ঝোপ বুঝে কোপ মারতে ওস্তাদ। তারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের জরিপ দেখে আমার পরিচিত কয়েকজন মৌলবাদী আওয়ামী লীগ সমর্থক এরই মধ্যে উল্লাসনৃত্য শুরু করেছে। এটি হচ্ছে একটি সম্ভাব্য সর্বনাশের পূর্ব লক্ষণ। ওপরে বর্ণিত ৩৫ শতাংশই হচ্ছে যেকোনো নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তাদের অধিকাংশেরই কোনো দলের প্রতি তেমন একটি অঙ্গীকার নেই। দেশে কোনো একটি অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটলে তারা বিগড়ে যায় এবং ঠিক সরকারের বিরুদ্ধে চলে যায়। তারা সবকিছু নিজেদের মতো করে চায়। উল্টোটা হলে সরকারকে দায়ী করে। আর এই উল্টো দিকে চলে যাওয়াটা অনেক সহজ করে দেয় সরকারি দলে থাকা কিছু অপরিণামদর্শী দুর্বৃত্ত, যাদের নিজের ছাড়া দলের প্রতি কোনো দায়িত্ব বা অঙ্গীকার নেই। তারা মৌসুমি পাখি। তারা আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেলে হয় বিদ্রোহী প্রার্থী হবে, অথবা অন্য দলে যোগ দেবে বা তা-ও না পারলে নিজ দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে ওভারটাইম কাজ করবে। সম্প্রতি নাসিরনগরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি আর মন্দির-প্রার্থনালয়ে যে কয়েকটি হামলা হলো তাতে দলের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে এই শ্রেণির মানুষ কখনো তা ধারণা করতে পারবে না। আর প্রধানমন্ত্রী যতই চেষ্টা করুন এই দুর্বৃত্তপনা দূর করতে, তা করতে হলে তাঁকে তো তাঁর দলের নেতাকর্মী আর প্রশাসনের ওপর নির্ভর করতে হবে। যেসব নেতাকর্মী এসব কুকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকে তাদের ওপর নির্ভর করা নিরর্থক। আর প্রশাসন কতটুকু সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে আর কতটুকু সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য ব্যস্ত থাকে, তা খতিয়ে দেখাটা জরুরি। এই যে উত্তরবঙ্গে সাঁওতালদের বাড়িঘরে পুলিশ আগুন দিল বলে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ছবি প্রকাশিত হয়েছে, সেটি যদি সত্য হয় তাহলে তার জন্য সরকারের ভাবমূর্তির যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব তো কখনো প্রশাসন নেবে না। তা-ও কি একজন শেখ হাসিনাকে নিতে হবে?
অনেকে মনে করেন, দেশের উন্নয়ন নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার চাবিকাঠি। একেবারেই ভ্রান্ত ধারণা। চন্দ্রবাবু নাইডু ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ১৯৯৫ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত। তাঁর শাসনামলে তিনি রাজ্যের চেহারা পাল্টে দিয়েছেন। সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বেড়েছিল লাফিয়ে লাফিয়ে। বেঙ্গালুরুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পেরেছিলেন কয়েক হাজার কোটি মার্কিন ডলার। হায়দরাবাদ হয়ে উঠেছিল ভারতের অন্যতম তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পের কেন্দ্রবিন্দু। রাজ্যে ই-গভর্ন্যান্স চালু করেছিলেন সবার আগে। জনপ্রশাসনে গতি বেড়েছিল কয়েক গুণ। ক্ষমতায় থাকাকালে মনে করা হতো চন্দ্রবাবু অসম্ভব জনপ্রিয়। হেরে গেলেন ২০০৪ সালের নির্বাচনে। কারণ হিসেবে বলা হয়, তিনি তথ্য-প্রযুক্তি উন্নয়নে যত মনোযোগী ছিলেন গ্রাম-অর্থনীতির ওপর ততটা মনোযোগ দেননি। নির্বাচনের পর চন্দ্রবাবুর সঙ্গে এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে দেখা হলে তাঁর নির্বাচনে পরাজয়ের পেছনের কারণ জানতে চাইলাম। তিনি অকপটে স্বীকার করলেন গ্রামের অর্থনীতির দিকে নজর না দেওয়ার কথা। তবে গুরুত্ব দিয়েছিলেন তাঁর প্রশাসনের এক বিরাটসংখ্যক আমলাতন্ত্রের অসহযোগিতার কথায়, যা তিনি ক্ষমতায় থাকতে বুঝতে পারেননি। ২০১৪ সালে চন্দ্রবাবু ফের অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। এবার তিনি আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। ১৯৭৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকার রাজত্ব করেছে। প্রায় ৩৪ বছর। জ্যোতি বসু ক্ষমতায় থাকার সময় পাল্টে গিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের চেহারা। জ্যোতি বসুর মৃত্যুর পর নেতৃত্বে যাঁরা ছিলেন তাঁদের দূরদর্শিতার অভাব ছিল। অক্ষমতা তো ছিলই। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অগোচরে দলে এক শ্রেণির দুর্বৃত্তের অনুপ্রবেশ ঘটে, যাদের দাপটে সাধারণ মানুষ বামফ্রন্টের ওপর আস্থা হারায়। শেষতক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো একজন নাটুকে রাজনীতিবিদকে জনগণ ক্ষমতায় বসায়।
এই মুহূর্তে তর্ক হতে পারে তৃণমূলের দুর্বৃত্তরা বেশি ক্ষমতাবান নাকি বামফ্রন্টের দুর্বৃত্তরা বেশি শক্তিশালী ছিল! তৃণমূলের জমানায় ভাড়া বাড়িতে উঠতে গেলেও মাস্তানদের চাঁদা দিতে হয়। অনেকে রাজ্যের বাইরে গিয়ে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন। কারণ এই রাজ্যে বিয়ে দিলে চাহিদামাফিক চাঁদা পৌঁছে দিতে হয় বলে অভিযোগ আছে। তবে অদূর ভবিষ্যতে মমতাকে ক্ষমতা থেকে সরানো হয়তো কঠিন হবে। কারণ সব দেশের রাজনীতিতে লোকদেখানো যুক্তিহীন জনপ্রিয়তার (Populism) একটা কদর রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে প্রমাণিত। মমতা এখনো পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের জনপ্রিয়তা উপভোগ করছেন।
আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার সামনে এই মুহূর্তে বিরোধী দল তেমন একটা চ্যালেঞ্জ নয়। তবে তারা যে চ্যালেঞ্জ হবে না, তা বলার সময় আসেনি; কারণ চ্যালেঞ্জ করার মতো অনেক বিষয় তারা না চাইতেই হাতে পেয়ে যাচ্ছে। নাসিরনগরের ঘটনা তার উত্কৃষ্ট প্রমাণ। আর একটি মহল তো চাইছে কিভাবে শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে চিরতরে বিদায় করা যায়। হাঙ্গেরিগামী বিমানের ঘটনা একটি অশনিসংকেত। আগামী সময়ে এমন ঘটনা যে আরো ঘটবে না তার নিশ্চয়তা কি আছে? যখন শেখ হাসিনার শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাঁর উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের জন্য আপনিই বাংলাদেশ’, তখন এই মুহূর্তে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকলে কী হবে এই বাংলাদেশের? প্রত্যাবর্তন ঘটবে কী সেই মিনি পাকিস্তান রূপে? ১৯৯১ ও ২০০১ সালের অভিজ্ঞতা মোটেও সুখের নয়। আওয়ামী লীগের আত্মসন্তুষ্টির খেসারত জাতির জন্য খুবই ক্ষতিকর ছিল। এখন থেকে সামনের নির্বাচন পর্যন্ত সময়টা মোটেও সংকটমুক্ত নয়। সময় যতই ঘনিয়ে আসবে সরকারকে চাপে ফেলতে শুরু হয়ে যেতে পারে নানা রকমের ঘটনা-দুর্ঘটনা। খালেদা জিয়া ও তাঁর সমমনা দলগুলো নিজেদের মতো নির্বাচন না হলে শুরু করে দিতে পারে দেশের বিরুদ্ধে আরেকটি যুদ্ধ। হয়তো এটাই হবে তাদের জন্য শেষ লড়াই। এরই মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবির বিজয় দিবসে মিছিল করতে শুরু করেছে। খালেদা জিয়া নির্বাচন কমিশন গঠনের ১৩ দফা ফর্মুলা দিয়েছেন। ১৮ তারিখ তা রাষ্ট্রপতিকে বোঝাতে বঙ্গভবনেও গেছেন। আত্মসন্তুষ্টিতে না ভুগে সম্ভাব্য লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতির এখনই সময় আওয়ামী লীগের।
২০ ডিসেম্বর, ২০১৬, কালের কণ্ঠ